নাম রফিক, পারিবারিক আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে উচ্চ মাধ্যমিকের পরে আর পড়া লেখা চালিয়ে যেতে পারেন নাই। বাবা ছোট্র বেলায় মারা গেছেন। পরিবারের দায়িত্ব এখন তার মাথায়।পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে চায়।বাবার ফেলে রাখা শেষ জমিটুকু আর বসতবাড়ি ছাড়া কিছু নেই। বড় পজিশনে মামা, চাচা না থাকায় কোন রকম তদবির ও করতে পারছে না চাকরি বাকরির জন্য।দেশে চাকরি না পেয়ে বিদেশে চলে যেতে চায়।
সে খবর পেল পাশের গ্রামের একজন বিদেশে লোক পাঠায় বলে প্রচার করছেন।বিদেশে যারা লোক পাঠায় গ্রামের ভাষায় তাকে দালাল বলা হয়। দেরি না করে রফিক ছুটলেন তার কাছে। ঘন্টা দুয়েক কথা বলার পরে বেশ হাসি মুখ নিয়ে ফিরেছেন নিজের গ্রামে। মাকে এসে সব খুলে বললেন, ১ মাসের মধ্যে চলে যেতে পারবো। বিমানের টিকিট খরচ দিতে হবে দেশে থেকে বাকি টাকা বিদেশের মাটিতে পা রেখে দিতে হবে। ১০০% নিশ্চিত, বিদেশে যাওয়া এবার কে ঠেকায়। কিন্তু টাকা, এদিক সেদিক আত্মীয় স্বজন সবার শরণাপন্ন হলো কেউ এগিয়ে আসছে না।অবশেষে বাবার রেখে যাওয়া জমির কথা মনে পরলো। প্রথমে মা রাজি না হলেও পরে ঠিকই সম্মতি দিলেন।
জমি বিক্রি করে দিয়ে টাকা নিয়ে গেলো পাশের গ্রামের সেই ব্যক্তির(দালালের) কাছে বাকি টাকা মায়ের কাছে রাখলো।এবার ওই লোক বললেন আপনাকে ঢাকা যেতে হবে, ইন্টারভিউ দিতে হবে, মেডিকেল করতে হবে এর জন্য আরো কিছু টাকা লাগবে। টাকা নিয়ে আগামীকাল আমাদের ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে।
মায়ের কাছ থেকে আরো ২০,০০০ টাকা নিয়ে পরেরদিন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। ঢাকা এসে ইন্টারভিউ, মেডিকেল সব করে খরচ দেখালো ১৫,০০০ টাকা। ১ দিন হোটেলে থাকলেন পরের দিন খবর আসলো তার ভিসা হয়ে যাবে ১৫ দিন সময় লাগবে। বিমান ভাড়া ৯০,০০০ জোগাড় করে রাখতে বললেন।রফিক খুব আনন্দের সাথে খুশি মনে বাড়ি ফিরলেন হাতে সময় ১৫ দিন। দেখতে দেখতে সময় চলে যাচ্ছে ১০ দিনের মাথায় খবর আসলো সব কিছু কন্ফার্ম একদিন পরেই তার ফ্লাইট।
মায়ের কাছে বলে যাচ্ছে সে ওই দেশে পৌঁছে ফোন করলে বাকি টাকা যাতে ব্যাংকে জমা করে দেয়। সবার থেকে বিদায় নিয়ে রফিক বিমান ভাড়া ৯০,০০০ নিয়ে ঢাকা রওনা হলেন। এসে দেখলেন তার মত আরো ১৭ জন বসে আছেন এজেন্সিতে। টাকা জমা দিলেন। খবর দিলো আগামীকাল রাতেই ফ্লাইট। হোটেলে ফিরে ঘুম হলো না রফিকের কখন রাত শেষ হবে। ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়লেন উঠে দেখলেন সকাল ১১ টা। ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে ব্যাগ গুছিয়ে এবার বসে বসে ভাবছেন পরিবারের কথা, আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। ভাবতে ভাবতে সারাদিন শেষ করে সন্ধ্যা হতেই ফোন আসলো তাড়াতাড়ি এজেন্সিতে যেতে।
হোটেল থেকে বেরিয়ে সোজা চলে গেলেন, গিয়ে দেখলেন সবাই রেডি হয়ে বসে আছে। কিছুক্ষন পর একটা গাড়ি আসলে সবাই গাড়িতে করে রওনা দিলেন এয়ারপোর্ট এর উদ্দেশ্যে। ঢাকার লাল নীল বাতি আবার কবে দেখবেন ভাবতে ভাবতে পৌঁছে গেলেন এয়ারপোর্ট। এয়ারপোর্টের সব ধরণের কার্যক্রম শেষ করে এয়ারপোর্টের মধ্যে থাকা একটি বাসে করে চলছেন বিমানের উদ্দেশ্যে। বিমানের কাছে গিয়ে চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে। একে একে সবাই উঠে যার যার আসন গ্রহণ করলেন। কিছু সময়ের মধ্যেই বিমান ছেড়ে দিলো রাত তখন ১১ টা বেজে ৫৯ ষাট মিনিট। বিমান ছাড়ার আনুমানিক ৫০ মিনিটের মাথায় ঘোষণা আসলো আমরা চলে আসছি সবাই যে যার আসনে থাকুন, আসন ত্যাগ করবেন না। এতো তাড়াতাড়ি চলে গেলেন সৌদি আরব।
বিমান থেকে নেমে সাথে থাকা ২ জন ব্যক্তির অনুকরণ করে সবাই পথ চলা শুরু করলেন। এয়ারপোর্টের মধ্যে ঢুকতেই চোখে পড়লো ইন্ডিয়া লেখা। জিজ্ঞেস করলেন পাশে থাকা লোককে সে বললো এইখানে ১ দিন থেকে তারপর আবার আরেকটি বিমানে যেতে হবে। তার কথায় এবার ঐখানে থাকা একটা গাড়িতে চড়ে রওনা দিলেন হোটেলের উদ্দেশ্যে। অনেক্ষন গাড়ি চলার পর কোনো একটা জায়গায় নিজেদের আবিষ্কার করলেন যেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে ১০ জন লোক। একজন একজন করে ভিতরে নিচ্ছে, এবার রফিকের পালা ভিতরে যেতেই চোখ বেঁধে হাত-পা বেঁধে রাখলো। মনে মনে ভয় পেলেও সাহস করে জিজ্ঞেস করলো হাত-পা, চোখ বাঁধলেন কেন ? কেউ একজন ভারী গলায় বললো বিদেশ যাবিনা চলে আসছোস তো। এখানে সকাল পর্যন্ত এই অবস্থায় থাক। সকাল হতেই চোখ খুলে দিলো চোখ খুলে দেখলো কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে আছে তার মধ্যে থেকে একজন একটা মোবাইল হাতে নিয়ে রফিকের দিকে এগিয়ে এসে বললো বাড়িতে ফোন দিচ্ছি, বলবি টাকা দিয়ে দিতে তুই বিদেশ চলে আসছোস। প্রথমে অসম্মতি জানালেও কিছুক্ষন শারীরিক নির্যাতনের পর ফোন দিয়ে তার মাকে বললো টাকা জমা দিয়ে দিতে বাড়ির কাছের বাজারের ব্যাংকে। রফিক অঝোরে কান্না শুরু করলো সব শেষ।
এইভাবেই হারিয়ে যায় রফিকদের স্বপ্ন, কেউ ভাগ্যক্রমে দেশে ফিরতে পারেন কেউ বা হারিয়ে যায় চিরতরে।সময় থাকতে সাবধান হন, বিদেশ যাবেন সোর্স দেখুন। প্রলোভনে জীবন শেষ করে দিবেন না।
বিঃ দ্রঃ গল্পটি কাল্পনিক কিন্তু এটাই বাস্তবতা। কোন এজেন্সি বা কাউকে ছোট্র করার জন্য নয়।
লিপিকার: ইমবা
0 Comments