সকাল-সন্ধ্যায় পঠিতব্য দো‘আ সমূহ

সকাল ও সন্ধ্যার যিকর থেকে কয়েকটি বিশেষ দু’আ যেইগুলো ছোট কিন্তু আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী ও প্রয়োজনীয়, অশেষ সওয়াব ও মর্যাদার অধিকারী। দু’আগুলো মুখস্থ না হওয়া পর্যন্ত বই দেখে দেখে পড়া যাবে, কোনো সমস্যা নাই। তবে চেষ্টা করা উচিত, সবার নিজেদের সময় ও সাধ্য অনুযায়ী যতগুলো দুয়া সম্ভব পড়া এবং তার উপর আমল করা। যার পক্ষে যেকয়টি সম্ভব ও ভালো লাগে। 


(১) আয়াতুল কুরসী একবার (সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব)।

(২) সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস তিনবার করে (সহীহ আবুদাঊদ হা/৩২২; তিরমিযী হা/৫৬৭)

(৩) আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রা:) বলেন, যখন সন্ধ্যা হত তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলতেন, 

উচ্চারণ : আমসাইনা- ওয়া আম্সাল্ মুলকু লিল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্ দাহু লা-শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়িং ক্বদীর, আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিন খায়রি হাযিহিল লাইলাতি ওয়া খায়রি মা-ফীহা ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শাররিহা- ওয়া শাররি মা-ফীহা, আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল কাসালি ওয়াল হারামি ওয়া সূইল কিবার, রব্বি ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিং ফিন্না-রি ওয়া আযা-বিং ফিল ক্ববর।

অর্থ : ‘আমরা এবং সমগ্র জগৎ আল্লাহর উদ্দেশ্যে সন্ধ্যায় প্রবেশ করলাম। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। তিনি ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোন মা‘বুদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা মাত্রই তাঁর। তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! আমি তোমরা নিকট এ রাতের মঙ্গল চাই এবং এ রাতে যা আছে, তার মঙ্গল কামনা করি। আশ্রয় চাই এ রাতের অমঙ্গল হ’তে এবং এ রাতে যে অমঙ্গল রয়েছে তা হ’তে। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই অলসতা, বার্ধক্য ও বার্ধক্যের অপকারিতা হ’তে। হে প্রভু! আশ্রয় চাই জাহান্নামের আযাব ও কবরের শাস্তি হ’তে। (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৮১ ‘সকাল-সন্ধ্যায় ও নিদ্রা যাওয়ার সময় কি বলবে’ অনুচ্ছেদ)।

(৪) শাদ্দাদ ইবনু আওস (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, শ্রেষ্ঠ ইস্তেগফার হল :

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রব্বী লা-ইলা-হা ইল্লা- আংতা খলাক্বতানী ওয়অ আনা- ‘আবদুকা ওয়া আনা- ‘আলা- ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্ব‘তু ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিং শাররি মা- স্বনা‘তু আবুউ লাকা বিনি‘মাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ বিযামবী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা- আংতা।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমরা বান্দা। আমি আমার সাধ্যমত তোমার প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। আমার ইপর তোমার অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমার পাপও স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয়ই তুমি ব্যতীত কোন ক্ষমাকরী নেই’।

রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিবিষ্ট মনে উক্ত দো‘আ দিবসে পাঠ করবে এবং সন্ধ্যার পূর্বে মারা যাবে, সে ব্যক্তি জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি ইয়াক্বীনের সাথে উক্ত দো‘আ রাতে পাঠ করবে এবং সকাল হওয়ার আগে মারা যাবে, সেও জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (বুখারী, মিশকাত হা/২৩৩৫ ‘তওবা ও ইস্তিগফার’ অনুচ্ছেদ)।

(৫) আব্দুর রহমান ইবনু আবু বাকরা (রা:) বলেন, আমি আমার আব্বাকে বললাম, আব্বা! আপনাকে প্রত্যেক সকালে ও বিকালে তিনবার করে বলতে শুনি-

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাদানী আল্লাহুম্মা ‘আ-ফিনী ফী সাম‘ঈ আল্লাহুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাস্বরী লা-ইলা-হা ইল্লা- আংতা।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার শরীরে নিরাপত্তা দান কর, আমার শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে নিরাপত্তা দান কর এবং আমার দৃষ্টিশক্তিতে নিরাপত্তা দান কর।’ তখন তিনি বললেন, হে বৎস! আমি রাসূল (সাঃ)-কে আলোচ্য বাক্যগুলি দ্বারা দো‘আ করতে শুনেছি। তাই আমি তাঁর নিয়ম পালন করতে ভালোবাসি (সহীহ আবুদাঊদ হা/৫০৯০, সনদ হাসান, মিশকাত হা/২৪১৩)।

(৬) আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, একদা আবুবকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ)! আমাকে এমন একটি দো‘আর কথা বলুন, যা আমি সকাল-সন্ধ্যায় পাঠ করব। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, তুমি বল, 

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ‘আ-লিমাল গাইবি ওয়াশ-শাহা-দাতি ফা-তিরস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি রব্বা কুল্লি শাইয়িং ওয়া মালীকিহ, আশহাদু আল্লা ইলা-লা-হা ইল্লা- আংতা আ‘ঊযুবিকা মিং শাররি নাফ্সী ওয়া মিং শাররিশ শায়ত্ব-নি ওয়া শিরকিহ।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আল্লাহ, যিনি অদৃশ্য-দৃশ্য সকল বিষয় অবগত, আসমান-যমীনের সৃষ্টিকর্তা, প্রত্যেক বস্তুর প্রতিপালক ও মালিক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ব্যতীত কোন মা‘বুদ নেই। আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার মনের অনিষ্ট হতে, শয়তানের অনিষ্ট ও তার শিরক হতে। এ দো‘আটি সকাল-সন্ধ্যায় এবং শয্যায় যাওয়ার সময়ও বলবে (আবুদাঊদ, সনদ সহীহ, ইবনু মাজাহ হা/৩৬৩২ মিশকাত হা/২৩৯০ ‘সকাল-সন্ধ্যায় কি বলবে অনুচ্ছেদ)।

(৭) আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) সকালে বলতেন, 

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বিকা আস্ববাহনা-ওয়া বিকা আম্সাইনা- ওয়া বিকা নাহ্ ইয়া- ওয়া বিকা নামূতু ওয়া ইলাইকাল মাস্বীর।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার সাহায্যে আমরা সকালে উঠি, আবার তোমার সাহায্যে সন্ধ্যায় উপনীত হই। তোমার নামে আমরা বেঁচে থাকি, তোমার নামে মৃত্যুবরণ করি এবং তোমারই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন’।

সন্ধ্যায় বলতেন,

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বিকা আম্সাইনা- ওয়া বিকা আস্ববাহ্:না- ওয়া বিকা নাহ:ইয়া- ওয়া বিকা নামূতু ওয়া ইলাইকান নুশূর।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার সাহায্যে আমরা সকালে উঠি, আবার তোমার সাহায্যেই সন্ধ্যায় উপনীত হই। তোমার নামে আমরা বেঁচে থাকি এবং তোমার নামেই মৃত্যুবরণ করি। তোমার নিকট রয়েছে আমাদের পুনরুত্থান’ (সহীহ আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৩৮৯, সনদ সহীহ, ইবনু মাজাহ হা/৩৮৬৮)।

(৮) আবু আইয়াশ (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় বলবে,

উচ্চারণ : লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহূ লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা- কুল্লি শাইয়িং ক্বদীর।

অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁর হাতেই রয়েছে রাজত্ব। প্রশংসা একমাত্র তাঁরই। তিনি সকল বিষয়ের ইপর ক্ষমতাবান’। এ আমল তার জন্য ইসমাঈল বংশীয় ১০ জন দাসমুক্ত করার সমতুল্য গণ্য হবে এবং তার জন্য ১০টি নেকী লেখা হবে, ১০টি পাপ মোচন করা হবে এবং তার ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। সারা দিন শয়তান হতে নিরাপদ থাকবে (সহীহ আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, সনদ সহীহ, মিশকাত হা/২৩৯৫)।

(৯) আবান ইবনু ওছমান (রাঃ) বলেন, আমি ওছমান ইবনু আফফান (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে বলবে,

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা- ইয়াযুররু মা‘আসমিহী শাইউং ফিল আরযি ওয়া লা-ফিস্-সামা-ই ওয়া হুয়াস সামী‘উল ‘আলীম।

অর্থ : ‘আমি ঐ আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি, যার নামে আরম্ভ করলে আসমান ও যমীনের কোন বস্তুই কোনরুপ ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। তাহলে কোন বালা-মুছীবত তাকে স্পর্শ করবে না’ (তিরমিযী, সহীহ আবুদাঊদ, হা/৫০৮৮, সনদ সহীহ, মিশকাত হা/২৩৯১)।

(১০) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে একশত বার এবং বিকালে একশত বার বলবে, 

উচ্চারণ: সুবহানাল্লা-হিল ‘আযীম ওয়া বিহামদিহি

অর্থ : ‘আমি উচ্চ মর্যাদাশীল আল্লাহ্র প্রশংসা সহকারে পবিত্রতা বর্ণনা করি’, তাহলে তাকে এমন মর্যাদা দেওয়া হবে, যে মর্যাদা সৃষ্টিকুলের মধ্যে আর কোন ব্যক্তিকে দেওয়া হবে না’ (তিরমিযী, সহীহ আবুদাঊদ হা/৫০৯১; সনদ সহীহ, মিশকাত হা/২৩০৪, ‘তাসবীহ ও তাহলীলের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ)।


এখানে ১০টি দো'আ আছে। কোথাও ভুল হলে সংশোধন করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। ধন্যবাদ। 

Post a Comment

0 Comments