দো’আ কবুলের সময় ও স্থান

 



দো'আ:


দো'আ অর্থ ডাকা/ইবাদত করা/আহবান করা । আল্লাহ তাআলা বলেন, ' তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব'(মুমিন ৬০)।  দো'আ অর্থ প্রশংসা সহকারে ডাকা। আল্লাহ বলেন, 'হে নবী ! আপনি বলুন, আমি আল্লাহর প্রশংসা করি অথবা রহমানের প্রশংসা করি ' (ইসরা ১১০; ৩য় খণ্ড, পাতা:৩৯৪ )

দো’আ কবুলের সময় ও স্থান :


(১)   লাইলাতুল ক্বদর দো’আ কবুলের অন্যতম সময় : আল্লাহ তা‘আলা লাইলাতুল ক্বদরকে এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলেছেন (ক্বদর-৩)।রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইবাদতের জন্য লাইলাতুল ক্বদরকে খুঁজতে বলতেন এবং নিজে লাইলাতুল ক্বদরে সিজদা করতেন (বুখারী, আলবানী, মিশকাত, হা/২০৮৬ ‘ছিয়াম অধ্যায়, ‘লাইলাতুল ক্বদর’ অনুচ্ছেদ)।রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে লাইলাতুল ক্বদরে নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়তে বলেন,
(আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুব্বুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা‘ফু আন্নী)

‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল এবং ক্ষমাকে ভালোবাসেন, কাজেই আমাকে ক্ষমা করুন’
(আহমদ, তিরিমিযী, ইবনু মাজাহ, সনদ সহীহ, তাহক্বীক্ব মিশকাত, হা/২০৯১)।

রাসূল (সাঃ) লাইলাতুল ক্বদরে ইবাদত করতেন এবং স্বীয় পরিবারকে ইবাদতের জন্য জাগিয়ে দিতেন
(মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত, হা/২০৯০)।



(২)  আরাফার মাঠ:  উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) বলেন, আমি আরাফার মাঠে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সওয়ারীর পিছনে ছিলাম, তিনি সেখানে দু’হাত তুলে দো‘আ করলেন’ (সহীহ নাসাঈ, হা/৩০১১ ‘আরাফার মাঠে দু’হাত তুলে দো‘আ করা’ অনুচ্ছেদ, ‘হজ্জ’ অধ্যায়)। অন্যত্র বর্ণিত আছে, আল্লাহ তা‘আলা আরাফার দিন মানুষকে সবচেয়ে বেশী জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন এবং ফেরেশতাগণের সামনে গৌরব করে বলেন, ‘এ সকল মানুষ (আরাফার মাঠে) কি চায়? অর্থ্যাৎ যা চায় তাই প্রদান করা হবে’ (মুসলিম, সহীহ ইবনু মাজাহ, হা/২৪৫৮; মিশকাত হা/২৫৯৪, আরাফার মাঠে অবস্থান অনুচ্ছেদ)।



(৩) ছাফা-মারওয়া পাহাড়ের উপর : জাবির (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছাফা পাহাড়ের উপর উঠে তিনবার বললেন, ( লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকালাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ইউহ:ই ওয়া ইউমীতু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাইইং ক্বদীর)।

অর্থ : ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন হক্ব মা‘বূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁর হাতে, প্রশংসা একমাত্র তাঁর। তিনি জীবন দান করেন এবং তিনি মরণ দান করেন, তিনি সকল ক্ষমতার অধিকারী’।

অতঃপর আল্লাহু আকবার বললেন ও আল-হামদুলিল্লাহ বললেন এবং তাঁর শক্তি-সামর্থ্য অনুপাতে দো‘আ করলেন। অনুরুপ মারওয়া পাহাড়ে উঠে বললেন,
(লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্:দাহূ লা-শারীকালাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাইইং ক্বদীর)।

তারপর (সুবহানাল্লাহি, আলহামদুলিল্লাহি, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু) বললেন। অতঃপর আল্লাহ্র ইচ্ছা অনুযায়ী দো‘আ করলেন (সহীহ নাসাঈ, হা/২৯৭৪, অনুচ্ছেদ ১৭২, ‘হজ্জ’ অধ্যায়, সনদ সহীহ)।



(৪)  ‘বায়তুল্লাহ’ বা কা‘বা ঘরকে দেখে দো‘আ : আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মক্কা প্রবেশ করে ‘হাজারে আসওয়াদ’ বা কালো পাথরের পাশে এসে পাথরটিকে চুম্বন করলেন, বায়তুল্লাহ ত্বাওয়াফ করলেন এবং ছাফা পাহাড়ে উঠে বায়তুল্লাহ্র দিকে মুখ করে হাত তুলে দো‘আ, যিকির ও প্রার্থনা করতে লাগলেন। (সহীহ আবুদাঊদ, হা/১৮৭২; সনদ সহীহ, মিশকাত হা/২৫৭৫ ‘হজ্জ’ অধ্যায়)।



(৫)  ছিয়াম অবস্থায় : আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণির লোকের দো‘আ ফেরত দেওয়া হয় না। তন্মধ্যে একজন হচ্ছে ছিয়াম পালনকারী, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ইফতার করে। (সহীহ ইবনু মাজাহ, হা/১৪৩২ ‘ছিয়াম’ অধ্যায়, সনদ সহীহ)।

(৬) হজ্জ পালনকালে পাথর নিক্ষেপের পর : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) শেষের দু’দিন পাথর নিক্ষেপের পর দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন এবং অনুনয়-বিনয় করে দো‘আ করতেন’ (সহীহ আবুদাঊদ, হা/১৯৭৩; ‘মানাসিক’ অধ্যায়, সনদ সহীহ)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তিনি পশ্চিম মুখী হয়ে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করতেন।(বুখারী হা/১৭৫৩; নাসাঈ, হা/৩০৮৩ ‘হজ্জ’ অধ্যায়)।

Post a Comment

0 Comments