প্রচলিত সোশ্যাল মিডিয়া ভিত্তিক Women and e- Commerce নিয়ে কিছু কথা

আলহামদুলিল্লাহ! Women and e- Commerce নিয়ে কাজ করছে এমন একটি পেইজ ৯০০০০০+ উদ্যোক্তা তৈরী করে ফেলেছে ইতিমধ্যেই! এমএলএম কোম্পানীগুলো বেকারদের অনেক বড় স্বপ্ন দেখিয়েছিল! কি হবে চাকুরীর পিছনে ছুটে এমএলএম এর ডান হাত আর বাম হাতের জাদুর পরশে হয়ে যেতে পারেন ত্রিলিয়নপতি! পরবর্তীতে যা হওয়ার তাই হলো! আশাহত আর নিঃস্ব হওয়ার চিত্র ছাড়া কিছুই দেখতে পেলামনা আমরা তবে সাংস্কৃতিক প্রেমি বাঙালীদের এতটুকুন লাভ হয়েছে যে, এম.এল.এম এর কারসাজি নিয়ে তারা একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি উপভোগ করতে পেরেছিল যার নাম দেওয়া হয় পিপড়া বিদ্যা।

ই- কমার্স বেইজড বিজনেস অনেক বেশী পপুলার হতে চলছে! তাই বলে একটা প্লাটফর্ম থেকে কোন ধরনের পেশাদারিত্বের বাইরে বেকার ছাত্র / ছাত্রী যুবক/যুবতি আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলকে উদ্যোক্তা বানিয়ে প্রতিদিন লাইক কমেন্টস এর লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে আজগুবি এক খেলায় মাতিয়ে রেখেছেন সকলকে! আর সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য কেউ কেউ নিজের পরনের পায়জামা আর ভ্যান থেকে কিনে কিছু প্রসাধনীর ছবি আপলোড করে গদবাধা স্বপ্ন দেখার গল্প ছেড়ে দিচ্ছেন কিছু না বুঝেই! কেউ কেউ সকল সামাজিক সম্পর্ক ভুলে গিয়ে সারাদিন পরে আছে ই-কমার্স সাইট গুলোতে। কেউ কেউ সফলতার গল্প শুনাচ্ছেন আর সব কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন স্যারকে।


এছাড়াও হঠাৎ করে দেশে খাঁটি মধু, খাঁটি ঘি, খাঁটি দুধ, খাঁটি গরুর ভুড়ি, খাঁটি পনির, খাঁটি দৈ, খাঁটি ইলিশ মাছ (কোন মাছ বিক্রেতা পদ্মার ইলিশ ছাড়া বেচে না। অন্য নদীর ইলিশ কি হয় কে জানে!!) ঘানিতে ভাঙানো সরিষার তেল (যে পরিমান তেলের বিজ্ঞাপন দেয়া হয় সেই হিসেবে ঘানি শত শত থাকার কথা।আমি আশেপাশে একটাও ঘানি দেখি না), খাঁটি চিনি মানে আখের চিনি, খাঁটি চাল, রঙীন সব কুকিজ, বেকারি আইটেম, চকোলেট, কেক, পেস্ট্রি সব উইতে পাওয়া যায়। আকর্ষনীয় রঙে ঢঙে সবচেয়ে লোভনীয় বিজ্ঞাপন থাকে ছানা মিষ্টি সন্দেশের। বিরিয়ানির রোস্ট রেজালা কালোভুনা কি নাই সেখানে!! এতবড় একটা প্লাটফর্ম, মহিলাদের কর্মসংস্থানের এতবড় একটা সুযোগ না শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায়। কারণ এই পণ্যগুলোর খাদ্যমান শুধু বিক্রেতা নিজেই নিশ্চিত করেন। ক্রেতার পক্ষ থেকে তাদের তৈরি পণ্যের কোয়ালিটি নির্ধারণ করে ক্রেতাকে আশ্বস্ত করার কেউ নাই এখন পর্যন্ত। 

ই-কমার্স কর্তৃপক্ষের উচিত প্রত্যেক খাদ্যসামগ্রী বিক্রেতার প্রোডাক্টের কোয়ালিটি চেক করে সার্টিফিকেট দেয়ার ব্যবস্থা করা। ক্ষুদ্র উদ্যাক্তাদের অনেকেরই সেভাবে ট্রেইনিং নাই। খাদ্যের মান রক্ষা করে রান্না করার জ্ঞান নাই। একবার যদি কোন কাস্টমার তার খাবার খেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন আর তিনি ক্ষতিপূরণ মামলা করে দেন তাহলে তার আর ব্যবসা করা লাগবে না। এখনো পর্যন্ত কেউ ভেজাল খাবার খেয়ে মরে গেলেও মামলা করে নাই। কিন্তু কোনদিন করবে না সেই গ্যারান্টি নাই।

আসলে স্যার একজন সফল উদ্যোক্তা! তিনি ভার্চুয়াল এমএলএম খুলে লাইক কমেন্টস্ এর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সফলতার শীর্ষে পৌছে গেছেন অনেক আগেই! আমি এই ভেবে কষ্ট পাচ্ছি যে এতগুলো আত্মবিশ্বাসী তরুন তরুনীর স্বপ্ন যখন মিথ্যায় পরিনত হবে। আমি অস্বীকার করছিনা যে কারো কারো সফলতা আসেনি। খুঁজে দেখুন তারা আগে থেকেই অন লাইন বিজনেস করছেন। তাদের একটা ছোট বিজনেস পরিচালনা করার জন্য মোটামুটি একটা সেটআপ আগে থেকেই আছে! তাই তারা সফলতার ফুলঝুড়ি ছড়াচ্ছেন আর নিজেকে পরিচিত করাচ্ছেন কৌশলে! সফল কোন উদ্যোক্তাকে বেশী দিন এই পেইজে দেখতে পাবেননা! আমি নিজের অভিজ্ঞতা এবং সংগৃহীত কিছু টিপস শেয়ার করলাম কিভাবে সফল করতে হয়।
একটি ই-কমার্স বিজনেস এখান থেকে আপনি বোঝার চেষ্টা করুন আপনি কতদূর হাঁটতে পারবেন। আমার নিজের একটি ই কমার্স সাইট ডেভেলপ করা আছে! সকল সেটআপ এখনও নেই তাই সময় নিচ্ছি।আমি জানি জার্নিটা কখন শুরু করলে আর হোঁচট খেতে হবেনা । ই-কমার্স বিজনেস কোম্পানি মডেল প্রতিটা বিজনেসের মূলে থাকে কিছু প্ল্যান বা পরিকল্পনা।নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া ই-কমার্স ব্যবসায়ে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না। আর সঠিক পরিকল্পনাই নির্ধারণ করবে কোম্পানির অগ্রগতি। এই ব্যবসায়ে বেশকিছু ডিপার্টমেন্ট রাখতে হবে, প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্ট তার নিজ নিজ কার্য গুরুত্বের সাথে সম্পাদন করলেই ব্যবসা অগ্রসর কিংবা প্রসার হবে।

নিচে কিছু ডিপার্টমেন্ট এর কথা উল্লেখ করা হলো যা খুব গুরুত্বপূর্ণ:

১।টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্টঃ 

প্রযুক্তিগত যেসকল কাজ এই ডিপার্টমেন্ট পরিচালনা করবে যেমন : 
  • ওয়েবসাইট ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট 
  • নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করা 
  • মোবাইল এপপ্স সেবা 
  • মোবাইল এপপ্স ও ওয়েবসাইট এর মধ্যে সমন্বয় 
  • অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে ঠিক মত কাজ করে কিনা 
  • সাইটকে ইউজার ফ্রেন্ডলি করা 
  • সব ধরণের টেকনিক্যাল সমস্যা অল্প সময়ে সমাধান করা ইত্যাদি 

২।পেমেন্ট ডিপার্টমেন্টঃ 

প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় পেমেন্ট বা অর্থনৈতিক বিষয় দেখার কাজ এ ডিপার্টমেন্টের। প্রতিষ্ঠানের ব্যয় এবং মার্কেটিং ব্যায় সহ সব কিছু এরাই দেখবে। 

৩।মার্কেটিং এন্ড সেলস ডিপার্টমেন্টঃ 

মার্কেটিং খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিয়মিত আপডেট থাকতে হবে মার্কেটিংয়ে। ক্রেতার আকর্ষণ বাড়াতে হবে ভিন্ন ভাবে প্রোডাক্ট মার্কেটিং এর মাধ্যমে। ডেলিভারি টিমের থেকে পাওয়া অর্থ ও অনলাইনে পাওয়া অর্থ পেমেন্ট ডিপার্টমেন্টকে দিতে হবে । এভাবে সমন্বয় রাখতে হবে ।


৪।কর্পোরেট মিটিং এন্ড ব্র্যান্ডিং ডিপার্টমেন্টঃ 

কোন নতুন প্রোডাক্ট এর এক্সেস কোন প্রতিষ্ঠানে করানো যায় নাকি তা নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এছাড়া বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সাথে মিটিং ও সেমিনার করতে হবে। কোম্পানির সাথে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় রাখতে হবে ব্র্যান্ডিং এর জন্য। ব্যবসায়িক বিভিন্ন সুযোগ গ্রহণ করতে হবে কোম্পানিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্যে। নতুন নতুন অ্যাডভার্টাইজমেন্ট তৈরি করা এবং ভিন্নরকম বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রোডাক্ট এর প্রতি মানুষের আগ্রহ তৈরী করতে হবে। মানুষ নতুনত্ব পছন্দ করে এই বিবেচনা মাথায় রেখে। 

৫।মার্কেট এনালাইসিস ও প্লানিং ডিপার্টমেন্টঃ 

বাজারের অবস্থা কেমন , মানুষ কি রকম প্রোডাক্ট এর প্রতি বেশি আগ্রহী সেইরকম এনালাইসিসগুলো করতে হবে । কি রকম প্রোডাক্ট এর প্রতি সামনের সময়ে আগ্রহ সৃষ্টি হবে তা বুঝতে হবে , জরিপ করতে হবে । কখন কি রকম প্রোডাক্ট মানুষ চায় তা এনালাইসিস করতে হবে । কোম্পানির জন্যে সময় উপযুগী বিভিন্ন বিষয় ভাবতে হবে যেমন সেল বাড়ানোর পদ্ধতি, বিজ্ঞাপনের ধরণ ইত্যাদি। 

৬।লিগ্যাল ও কোয়ালিটি কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্টঃ

যাবতীয় আইনি বিষয়ক সমস্যা ও পণ্যের গুনগত মান নিশ্চিত করণ বিষয়াদি দেখবে ও ব্যবস্থা গ্রহণ করবে । 

৭।ডেলিভারি ডিপার্টমেন্টঃ

 ডেলিভারি ডিপার্টমেন্ট হবে কোম্পানির সবথেকে বড় ডিপার্টমেন্ট। প্রোডাক্ট আদান প্রদান এর যাবতীয় কাজ এরাই সম্পাদন করবে। 
  • প্রোডাক্ট অর্ডার টিমঃ ক্রেতার কাছ থেকে প্রোডাক্ট এর অর্ডার গ্রহণ করবে।  
  • প্রোডাক্ট সোর্সিং টিমঃ প্রোডাক্ট কোথায় পাওয়া যাবে তার সোর্স করবে এবং সংগ্রহ করবে । 
  • প্রোডাক্ট রিসার্স ও ডেভেলপমেন্ট টিমঃ প্রোডাক্ট এর গুনগত মান ঠিক আছে কিনা তা নিয়ে রিসার্স করবে আর নিজেদের প্রোডাক্ট থাকলে তার সঠিক তৈরী এবং মান উন্নয়ন চেক করবে। 
  • প্রোডাক্ট ভ্যালু নির্ধারণ টিমঃ এ টিমের কাজ হবে বাজার যাচাই করে প্রোডাক্ট এর ভ্যালু নির্ধারণ করা , যাতে করে সহনীয় এবং আকর্ষণীয় মূল্যে ক্রেতা প্রোডাক্ট পায় । সাথে নিজেদের লাভ কত থাকবে তাও ঠিক করা । 
  • প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি এবং ভিডিওগ্রাফি টিমঃ প্রোডাক্ট এর সুন্দর ফটোগ্রাফি এবং ভিডিওগ্রাফি নিয়ে কাজ করবে এই টিম। 
  • প্রোডাক্ট রিভিউ টিমঃ যেসকল কাস্টমার সার্ভিস পেয়ে সন্তুষ্ট তাদের থেকে রিভিউ সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়া প্রোডাক্ট বিষয়ক সুন্দর পরিপাটি আকর্ষণীয় ছবি সম্বলিত রিভিউ তৈরি করা যাতে ক্রেতা প্রোডাক্ট রিভিউ পড়ে এর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে প্রোডাক্ট কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করে। 
  • প্রোডাক্ট প্যাকেজিং টিমঃ সুন্দর প্যাকেজিং সিস্টেম ক্রেতার আকর্ষণের আর একটি কারণ প্রোডাক্ট সুন্দরভাবে প্যাকেজ করাই হচ্ছে এই টিমের একমাত্র কাজ । 
  • প্রোডাক্ট ডেলিভারি টিমঃ এই টিমের সেলস ডিপার্টমেন্ট এর সাথে এদের সংশ্লিষ্টতা থাকবে। তাদের কাজ হবে প্রোডাক্ট ডেলিভারি করা ও পেমেন্ট সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টকে তা দেওয়া । 

৮।কাস্টমার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টঃ 

কাস্টমার কে সুন্দর সার্ভিস দিলে পরের বার আবার সেই কাস্টমার প্রোডাক্ট এর জন্য আপনাকেই নক করবে। তাই কাস্টমার প্রোডাক্ট নিয়ে কোন সমস্যায় পরলে কাস্টমারের সাথে কথা বলা , তার সার্ভিস নিশ্চিত করে দেয়ার দায়িত্ব এই টিমের।
 
৯। ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টঃ

যাবতীয় সব বিষয়গুলো সমন্বয় সাধন করে কোম্পানি পরিচালনা করা, বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া কোম্পানিকে ভালো অবস্থায় নিয়ে যাওয়া এই ডিপার্টমেন্ট এর কাজ । 

বিঃদ্রঃ সবগুলো ডিপার্টমেন্ট নিয়ে কাজ করতে হবে না হয় এই ব্যবসায় নামা এত সহজ নয় । 

 
ইসতিয়াক আজাদ
 ইসতিয়াক আজাদ


Post a Comment

0 Comments